পেঁয়াজ চাষের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
পেজ সূচীঃ পেঁয়াজ চাষের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
-
কি ধরনের জমিতে পেঁয়াজ চাষ উপযোগী
-
পেঁয়াজ চাষে বীজ নির্বাচন ও বিপণন
- তাহেরপুরী পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি
- তাহেরপুরী পেঁয়াজ চাষের কৌশল
- পেঁয়াজ চাষে অধিক ফলনের কৌশল
- পেঁয়াজ চাষের সঠিক পদ্ধতি
- পেঁয়াজ চাষের সঠিক সার প্রয়োগের পদ্ধতি
- পিয়াজে কি কি ধরনের রোগ হয়
-
পেঁয়াজ চাষের রোগ চেনার উপায়
-
পেঁয়াজের কোন রোগে কি ধরনের ঔষধ ব্যবহার করবেন
- শেষ কথা
জমি নির্বাচন
বীজ নির্বাচন ও বপন
তাহেরপুরী পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি
তাহেরপুরী পেঁয়াজ বাংলাদেশের একটি সুপরিচিত স্থানীয় জাত, যা উচ্চ ফলনশীল এবং মানসম্মত কন্দ উৎপাদনে সক্ষম। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে এই পেঁয়াজ চাষ করলে কৃষকরা ভালো ফলন ও লাভ পেতে পারেন। নিচে তাহেরপুরী পেঁয়াজ চাষের বিস্তারিত পদ্ধতি আলোচনা করা হলো:
জমি নির্বাচন ও মাটি প্রস্তুতি
উর্বর, সুনিষ্কাশিত বেলে-দোআঁশ মাটি তাহেরপুরী পেঁয়াজ চাষের জন্য উপযুক্ত। জমিতে পানি জমে না এমন স্থানে চাষ করা উচিত, কারণ পানি জমলে কন্দ পচে যেতে পারে। জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। প্রতি শতকে ১০-১৫ কেজি পচা গোবর সার মাটির সাথে মিশিয়ে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করা যায়।
বীজতলা প্রস্তুতি ও বীজ বপন
তাহেরপুরী পেঁয়াজের বীজতলা তৈরির জন্য ১ মিটার চওড়া ও ৩ মিটার লম্বা বেড তৈরি করতে হবে। প্রতি বর্গমিটারে ৫-৭ গ্রাম বীজ বপন করা যায়। বীজ বপনের আগে ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বাড়ানো যায়। বীজ বপনের পর পাতলা মাটি বা গোবরের স্তর দিয়ে ঢেকে দিতে হবে এবং হালকা সেচ দিতে হবে।
চারা রোপণ
বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিন পর চারা ১৫-২০ সেমি লম্বা হলে মূল জমিতে রোপণ করা যায়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ১৫ সেমি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১০ সেমি রাখতে হবে। রোপণের পরপরই হালকা সেচ দিতে হবে, যাতে চারা মাটিতে ভালোভাবে স্থিতি পায়।
সার ব্যবস্থাপনা
তাহেরপুরী পেঁয়াজের ভালো ফলনের জন্য সুষম সার প্রয়োগ জরুরি। প্রতি শতকে নিম্নরূপ সার প্রয়োগ করা যেতে পারে:
- ইউরিয়া: ২০০ গ্রাম
- টিএসপি: ১০০ গ্রাম
- এমওপি: ১০০ গ্রাম
টিএসপি ও এমওপি জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করা উচিত: প্রথম কিস্তি রোপণের ১৫ দিন পর, দ্বিতীয় কিস্তি ৩০ দিন পর, এবং তৃতীয় কিস্তি ৪৫ দিন পর।
সেচ ও আগাছা নিয়ন্ত্রণ
প্রথম সেচ রোপণের পরপরই দিতে হবে। পরবর্তী সেচ ৭-১০ দিন অন্তর দিতে হবে, তবে মাটির আর্দ্রতা অনুযায়ী সেচের সময়সূচি নির্ধারণ করতে হবে। আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে, কারণ আগাছা পেঁয়াজের বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে।
রোগ ও পোকা দমন
তাহেরপুরী পেঁয়াজে সাধারণত ডাউনি মিলডিউ, পার্পল ব্লচ এবং থ্রিপসের আক্রমণ দেখা যায়। রোগ প্রতিরোধের জন্য সুষম সার প্রয়োগ, সঠিক সেচ ব্যবস্থাপনা এবং প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
কন্দ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
রোপণের ১০০-১২০ দিন পর পেঁয়াজের পাতা হলুদ হয়ে গেলে কন্দ সংগ্রহের উপযুক্ত সময় হয়। কন্দ সংগ্রহের পর ২-৩ দিন রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। শুকানোর পর ঠাণ্ডা ও শুষ্ক স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে পেঁয়াজ দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে তাহেরপুরী পেঁয়াজ চাষ করলে কৃষকরা উচ্চ ফলন ও ভালো মানের পেঁয়াজ উৎপাদন করতে সক্ষম হবেন।
পেঁয়াজ চাষের আরও বিস্তারিত জানতে নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন
পেঁয়াজ চাষে অধিক ফলনের কৌশল
পেঁয়াজ চাষে অধিক ফলন পেতে কিছু নির্দিষ্ট কৌশল অবলম্বন করতে হয়, যা জমির পরিচর্যা, সঠিক সময়ে বীজ বপন, সার ব্যবস্থাপনা এবং সেচ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিশ্চিত করা যায়। নিচে অধিক ফলন পেতে পেঁয়াজ চাষের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশল তুলে ধরা হলো
সঠিক জাত নির্বাচন
উচ্চ ফলনশীল এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত নির্বাচন পেঁয়াজ চাষের প্রথম ধাপ। বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের পেঁয়াজের জাত পাওয়া যায়, যেমন
- তাহেরপুরীঃ মধ্যম দৈর্ঘ্যের এবং স্বল্প সময়ে উচ্চ ফলনশীল।
- হাইব্রিড জাতঃ উচ্চ ফলন এবং দ্রুত বৃদ্ধি।
- বোম্বাই লালঃ বড় আকারের ও উচ্চ ফলনশীল।
উন্নত জমি প্রস্তুতি
জমি ভালোভাবে তৈরি করা হলে পেঁয়াজ গাছের শিকড় মাটির নিচ থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে এবং কন্দের বৃদ্ধি ভালো হয়। উন্নত জমি প্রস্তুতির জন্য
- জমিতে ২-৩ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
- মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য ১০-১৫ কেজি গোবর সার প্রতি শতক জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
- জমি পর্যাপ্ত পরিমাণে সুনিষ্কাশিত করতে হবে, যাতে বৃষ্টির পানি জমে না থাকে।
সঠিক সময়ে বীজ বপন ও চারা রোপণ
পেঁয়াজ চাষের সঠিক সময়ে বীজ বপন ও চারা রোপণ ফলনের উপর বড় প্রভাব ফেলে। সাধারণত শীতকালীন পেঁয়াজ অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে বপন করতে হয়, এবং চারা রোপণের সময় ৪০-৪৫ দিন পর (ডিসেম্বর-জানুয়ারি)।
দূরত্ব মেনে রোপণঃ
- গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১০ সেমি এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব ১৫-২০ সেমি রাখতে হবে।
- সঠিক দূরত্ব বজায় রাখলে গাছ পর্যাপ্ত আলো, পানি এবং পুষ্টি পায়।
সার ব্যবস্থাপনা
সুষম সার ব্যবস্থাপনা পেঁয়াজের কন্দের বৃদ্ধিতে সহায়ক। পেঁয়াজ চাষে নিম্নোক্ত সারের পরিমাণ ব্যবহৃত হয়
- ইউরিয়াঃ ২৫০-৩০০ গ্রাম প্রতি শতক
- টিএসপি (ফসফেট সার) ১৫০-২০০ গ্রাম প্রতি শতক
- এমওপি (পটাশ সার) ১৫০-২০০ গ্রাম প্রতি শতক
- জিপসামঃ ৫০-৬০ গ্রাম প্রতি শতক
সারের প্রয়োগ পদ্ধতি
- টিএসপি, এমওপি এবং জিপসাম জমি তৈরির সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
- ইউরিয়া দুই বা তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে প্রথম কিস্তি রোপণের ১৫ দিন পর, দ্বিতীয় কিস্তি ৩০ দিন পর, এবং তৃতীয় কিস্তি প্রয়োজন হলে ৪৫ দিন পর।
সেচ ব্যবস্থাপনা
পেঁয়াজ গাছের সঠিক বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত সেচ গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সেচের অভাবে ফলন কম হতে পারে। মাটি শুকিয়ে গেলে সেচ দিতে হবে এবং পেঁয়াজের কন্দ পাকার সময় সেচ বন্ধ করতে হবে। সাধারণত প্রতি ৭-১০ দিন অন্তর সেচ দেওয়া প্রয়োজন।
আগাছা নিয়ন্ত্রণ
আগাছা পেঁয়াজের ফলন হ্রাস করে, কারণ আগাছা পেঁয়াজ গাছের পুষ্টি গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করে। প্রতি ১৫-২০ দিন অন্তর আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
মালচিং কৌশল
পেঁয়াজ চাষে মালচিং একটি উন্নত কৌশল, যা মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং আগাছার বৃদ্ধি কমায়। জমির উপরে খড় বা পলিথিনের স্তর দেওয়ার মাধ্যমে মালচিং করা যায়। এতে পানি সাশ্রয় হয় এবং মাটি শীতল থাকে, যা কন্দের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
রোগবালাই ও পোকা দমন
রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ পেঁয়াজের ফলনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। সঠিক সময়ে রোগবালাই ও পোকা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ফলন কমে যেতে পারে।
রোগ
- ডাউনি মিলডিউঃ পাতার উপর সাদা আস্তরণ পড়ে, ফলে গাছ শুকিয়ে যায়। ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
- পার্পল ব্লচঃ পাতায় বেগুনি রঙের দাগ দেখা যায়, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এর জন্য ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।
পোকা
- থ্রিপসঃ পাতায় রস শোষণ করে পাতাকে কুঁচকে দেয়, ফলে গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। নিয়মিত কীটনাশক ব্যবহার করলে এর দমন সম্ভব।
প্রাকৃতিক উপায়ে পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য পেঁয়াজ চাষে ফসলের পাশাপাশি নিম গাছের পাতা বা অন্য ধরনের জৈব উপকরণ প্রয়োগ করা যেতে পারে।
সঠিক সময়ে কন্দ সংগ্রহ
পেঁয়াজের কন্দ পাকার পর সঠিক সময়ে সংগ্রহ না করলে ফলন কমে যেতে পারে। সাধারণত রোপণের ১০০-১২০ দিন পর পেঁয়াজের পাতা হলুদ হয়ে গেলে এবং মাটিতে ঝুলে পড়লে কন্দ সংগ্রহের উপযুক্ত সময় হয়।
কন্দ সংগ্রহের পদ্ধতি
- কন্দ সংগ্রহের পরপরই কয়েক দিন রোদে শুকিয়ে মাটি ও ময়লা পরিষ্কার করে নিতে হবে।
- দীর্ঘ সময় সংরক্ষণের জন্য পেঁয়াজকে ঠাণ্ডা ও শুষ্ক স্থানে রাখতে হবে।
জৈব পদ্ধতির ব্যবহার
কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের পাশাপাশি জৈব পদ্ধতি অনুসরণ করলে অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব। জৈব সারের ব্যবহার মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে এবং ফসলকে আরও স্বাস্থ্যকর করে তোলে। ভার্মিকম্পোস্ট, সবুজ সার এবং অন্যান্য জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে মাটির স্বাস্থ্য বজায় রাখা সম্ভব।
অধিক ফলনের জন্য পেঁয়াজ চাষে সঠিক জাত নির্বাচন, জমি প্রস্তুতি, সার ব্যবস্থাপনা, নিয়মিত সেচ ও আগাছা নিয়ন্ত্রণ, রোগ ও পোকা দমন, এবং সঠিক সময়ে কন্দ সংগ্রহ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পেঁয়াজের কন্দ বড়, সুষম এবং মানসম্পন্ন করতে এসব কৌশলগুলো সঠিকভাবে মেনে চলা উচিত।
পেঁয়াজ চাষের সঠিক সার প্রয়োগের পদ্ধতি
পেঁয়াজ চাষে সঠিক সার ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি কন্দের আকার, মান এবং ফলনের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। সার ব্যবস্থাপনার সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে পেঁয়াজ গাছ পুষ্টি পায় এবং মাটি উর্বর থাকে, যা ফলন বৃদ্ধি করে। এখানে পেঁয়াজ চাষের সঠিক সার প্রয়োগের ধাপ ও পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:
জমি প্রস্তুতির সময় সার প্রয়োগ
জমি চাষের সময় সঠিক পরিমাণে গোবর বা জৈব সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। এটি মাটির উর্বরতা বাড়ায় এবং মাটির গঠন উন্নত করে।
গোবর সার/জৈব সার
- প্রতি শতক জমিতে ১০-১৫ কেজি গোবর সার বা ভার্মিকম্পোস্ট মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
- জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং রাসায়নিক সারের প্রয়োজন কমে যায়।
রাসায়নিক সার প্রয়োগ
রাসায়নিক সার পেঁয়াজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে ফসলের সুষম পুষ্টি সরবরাহ করা হয়। রাসায়নিক সারের সঠিক মাত্রা মেনে প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণত পেঁয়াজ চাষে নিম্নোক্ত সারগুলো ব্যবহৃত হয়
সারের ধরন এবং প্রয়োজনীয় পরিমাণ
- ইউরিয়াঃ ২৫০-৩০০ গ্রাম প্রতি শতক
- টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) ১৫০-২০০ গ্রাম প্রতি শতক
- এমওপি (মিউরিয়েট অফ পটাশ) ১৫০-২০০ গ্রাম প্রতি শতক
- জিপসামঃ ৫০-৬০ গ্রাম প্রতি শতক
সারের কাজ
- ইউরিয়া নাইট্রোজেন সরবরাহ করে, যা পেঁয়াজের সবুজ পাতা ও কন্দের বৃদ্ধি বাড়ায়।
- টিএসপি ফসফরাস সরবরাহ করে, যা শিকড়ের বৃদ্ধি ও কন্দের গঠন উন্নত করে।
- এমওপি পটাশিয়াম সরবরাহ করে, যা গাছকে শক্তিশালী করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- জিপসাম সালফার সরবরাহ করে, যা পেঁয়াজের মান উন্নত করে এবং স্বাদ বৃদ্ধি করে।
প্রথম ধাপঃ জমি তৈরির সময় সার প্রয়োগ
- জমি তৈরির সময় টিএসপি, এমওপি, এবং জিপসাম সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
- জমি চাষের পর প্রথম সেচের আগে এই সারের প্রয়োগ করা সবচেয়ে উপযোগী, কারণ এতে সার মাটির গভীরে প্রবেশ করে এবং শিকড়ের কাছাকাছি পৌঁছায়।
দ্বিতীয় ধাপঃ ইউরিয়া সার প্রয়োগ
ইউরিয়া সার পেঁয়াজ চাষে দুই বা তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হয়। ইউরিয়া সার গাছের সবুজ পাতা ও কন্দের বৃদ্ধিতে সহায়ক, তাই এটি ধাপে ধাপে প্রয়োগ করলে গাছ বেশি পুষ্টি পায়।
ইউরিয়া সারের কিস্ত
প্রথম কিস্তিঃ চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পর ইউরিয়ার প্রথম কিস্তি দিতে হবে। এটি কন্দ গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে পুষ্টি সরবরাহ করে দ্বিতীয় কিস্তিঃ ৩০-৩৫ দিন পর ইউরিয়ার দ্বিতীয় কিস্তি দিতে হবে। এই সময়ে গাছের সবুজ পাতা ও কন্দ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তৃতীয় কিস্তিঃ প্রয়োজনে রোপণের ৪৫-৫০ দিন পর তৃতীয় কিস্তি দেওয়া যায়, তবে এ সময় বেশি সেচ দেওয়া যাবে না।
জৈব সার ব্যবহারের গুরুত্ব
পেঁয়াজ চাষে জৈব সারের ব্যবহার মাটির গঠন ও উর্বরতা বাড়ায়। এটি রাসায়নিক সারের প্রয়োগ কমাতে সাহায্য করে এবং গাছের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ভার্মিকম্পোস্ট, সবুজ সার (গাছপালা থেকে তৈরি সার) এবং অন্যান্য জৈব সার প্রয়োগ করলে মাটির জৈবিক গুণাবলী বৃদ্ধি পায় এবং মাটিতে পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ে।
মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ব্যবহার
পেঁয়াজ গাছের সুষম বৃদ্ধি ও উন্নত মানের ফলনের জন্য মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট প্রয়োজন। বিশেষ করে, সালফার ও বোরন গাছের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
- সালফার পেঁয়াজের স্বাদ ও মান উন্নত করে।
- বোরন কন্দ গঠনে সহায়ক এবং পেঁয়াজের আকার বড় করতে সাহায্য করে।
ফোলিয়ার স্প্রে (পাতায় স্প্রে) পদ্ধতি
পেঁয়াজ গাছে কখনও কখনও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সরাসরি পাতায় স্প্রে করা হয়। এই পদ্ধতিতে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যেমন জিংক, বোরন এবং সালফার দ্রবীভূত করে স্প্রে করা হয়। এতে গাছ দ্রুত পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে এবং ফলনের মান বৃদ্ধি পায়।
সেচের সাথে সার প্রয়োগ (ফার্টিগেশন)
ফার্টিগেশন পদ্ধতিতে সেচের পানির সাথে দ্রবীভূত সার প্রয়োগ করা হয়। এই পদ্ধতিতে গাছ দ্রুত সার গ্রহণ করে এবং কন্দের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। বিশেষ করে ইউরিয়া ও পটাশিয়াম দ্রবীভূত করে সেচের সময় জমিতে দেওয়া হয়। এটি সার প্রয়োগের একটি আধুনিক ও কার্যকর পদ্ধতি।
আগাছা নিয়ন্ত্রণ ও সার প্রয়োগের সমন্বয়
আগাছা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জমিতে সারের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। আগাছা যদি নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, তবে তা পেঁয়াজের পুষ্টি শোষণ করে এবং ফলন কমিয়ে দেয়। আগাছা নিয়ন্ত্রণের জন্য মাটির মাঝে মাঝে আলগা করে দিতে হবে এবং আগাছা হাত দিয়ে তুলে ফেলতে হবে।
পেঁয়াজ চাষে সঠিক সার ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। জমি তৈরির সময়, চারা রোপণের পর এবং কন্দ গঠনের সময় সঠিক পরিমাণে সার প্রয়োগ করতে হবে। সুষম সার ব্যবস্থাপনা, জৈব সার ব্যবহার এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সরবরাহের মাধ্যমে পেঁয়াজের ফলন এবং মান বৃদ্ধি করা সম্ভব।
আরজে লতিফ ডিএম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url